বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক♛্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি একজন সাহসী, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নারী। নিজের দেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন উজ্জীবিত রাখার জন্য নিজেকে সচেতনবোꦓধে দীপ্ত রেখেছিলেন।
১৯৩০ সাল। সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করা হয়। এর কয়েক দিনের মধ্যে জালালাবাদ পাহাড়ে কয়েক শ নিয়মিত সেনার সঙ্গে বিপ্লবীদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। একই বছরে লীলা নাগের নেতৃত্বে গঠিত মহিলা সত্যাগ্রহ কমিটিরℱ উদ্যোগে নারীরা ঢাকায় গান্ধীজির লবণ-সত্যাগ্রহ আন্দোলনে সমবেত হন। যুগসন্ধির সময়। বিপ্লবীরা এ সময়কে চিহ্নিত করেছেন অগ্নিযুগ হিসেবে। স্বাধীনতার স্বপ্নের পাশাপাশি প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছেন বিপ্লবীরা। ওঁরা দেখতে পান, চট্টগ্রামের ইউরোপিয়ান ক্লাবের গেটের ফলকে লেখা আছে ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’। বিপ্লবী নেতা সূর্য সেন এ ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রীতিলতাকে। দায়িত্ব দিয়েছিলেন মর্যাদাবোধের জায়গায় দেশবাসীকে উন্নীত করতে। কাট্টলির সাগরতীরে বঙ্গোপসাগর গর্জন করে। সেখানে প্রীতিলতা ও তার সঙ্গীরা অস্ত্র চালনা শেখেন𝕴। ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের তারিখ ঠিক হয় ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২।
আক্রমণের আগে প্রীতিলতা একটি বিবৃতি লিখেছিলেন : “আমি বিধিপূর্বক ঘোষণা করিতেছি যে, যে প্রতিষ্ঠানের উচ্চ আদর্শে অনুপ্রাণিত হইয়া, অত্যাচারের স্বার্থসাধনে নিয়োজিত সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ। শাসনের উচ্ছেদ সাধন করিয়া আমার মাতৃভূমি ভারতবর্ষে গণতান্তিক শাসন প্রবর্তন করিতে ইচ্ছুক, আমি সেই ভারতীয় রিপাবলিকান আমি চট্টগ্রাম শাখার সদস্য। এই বিখ্যাত চট্টগ্রাম শাখা’ দেশের যুবকদের দেশপ্রেমকে নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ করিয়াছে। স্মরণীয় ১৯৩০-এর ১৮ এপ্রিল এবং উহার পরবর্তী𝓡 পবিত্র জালালাবাদ ও পরে কালারপুল ফেনী, ঢাকা, কুমিল্লা, চন্দননগর ও ধলঘাটের বীরোচিত কার্যসমূহ ভারতীয় মুক্তিকামী বিদ্রোহীদের মনে এক নতুন প্রেরণা জাগাইয়া তুলিয়াছে। আমি এইরূপ গৌরবমণ্ডিত একটি সংঘের সদস্য হইতে পারিয়া নিজেকে সৌভাগ্যবতী অনুভব করিতেছি। আমার দেশের মুক্তির জন্য এই সশস্ত্র যুদ্ধ করিতেছি। অদ্যকার পাহাড🃏়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ স্বাধীনতাযুদ্ধের একটি অংশ।” বিবৃতির এইটুকু সূচনা-অংশ। শুধু বিপ্লবী হিসেবে নয়, একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে কত কঠিন স্বরে তিনি ব্যক্ত করেছেন। নিজের কথা। তিনি শেষ করেছেন এই কথা বলে : ‘নারীরা আজ কঠোর সংকল্প নিয়াছে যে, আমার দেশের ভগিনীরা আজ নিজেকে দুর্বল মনে করিবেন না। সশস্ত্র ভারতীয় নারী সহস্র বিপদ ও বাধাকে চূর্ণ করিয়া এই বিদ্রোহ ও সশস্ত্র মুক্তি আন্দোলনে যোগদান করিবেন এবং তাহার জন্য নিজেকে তৈয়ার। করিবেন–এই আশা লইয়াই আমি আজ আত্মদানে অগ্রসর হইলাম।
আত্মদানের ইতিহাস রচনা করে স্বাধী🅠নতা অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের দৃষ্টান্ত প্রীতিলতা। মাত্ಌর ২১ বছর বয়সে তিনি ইতিহাসে অমর হয়েছেন। তাঁকে আমাদের স্মরণ করে যেতেই হবে।
লেখক: সম্পাদক, সংবাদ প্রকাশ